ঢাকা: কপ-২৭ জলবায়ু সম্মেলনে বিপদাপন্ন দেশগুলোর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে অর্থায়নের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে এ জন্য একটি নীতি কাঠামো ও বাস্তবায়ন কৌশল প্রণয়ন করা হবে।

এ বিষয়ে আগামী বছর জলবায়ু সম্মেলনে স্বল্পোন্নত ও বিপদাপন্ন দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষায় বাংলাদেশকে নেতৃত্বের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।

সোমবার (৫ ডিসেম্বর) ‘কপ-২৭ ফলাফল এবং বাংলাদেশের করণীয়: ক্ষয়ক্ষতি অর্থায়নের পরবর্তী আলোচনায় বাংলাদেশকে অবশ্যই নেতৃত্বে থাকতে হবে’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে যৌথভাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে অ্যাওসেড, কানসা-বিডি, কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ (সিপিডি), কোস্ট ফাউন্ডেশনর, সেন্টার ফর পার্টিসেপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি), সেন্টার ফর সাসটেইনেবল রুরাল লাইভলিহুড (সিএসআরএল), ইক্যুইডিবিডি এবং লিডারস।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, এবারের কপ-২৭ জলবায়ু সম্মেলনে অর্জন ছিল বিপদাপন্ন দেশগুলোর ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি আলোচ্যসূচি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা এবং সম্মেলন শেষে ধনী দেশগুলোর কাছ থেকে এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতি আদায় করা। কিছু ধনী দেশ এর বিরোধিতা করলেও বিপদাপন্ন দেশগুলোর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে অর্থায়নের ঘোষণা করা হয়েছে।

বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিপদাপন্ন দেশগুলোর অর্থায়নের জন্য আগামী ২০২৪ সাল অর্থাৎ কপ-২৭ এর মধ্যে এ বিষয়ে একটি নীতি কাঠামো ও বাস্তবায়ন কৌশল প্রণয়ন করা হবে। এই বাস্তবায়ন কৌশল প্রণয়ন বা খসড়া প্রস্তুত করার জন্য একটি কমিটি গঠনের রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। ২৪ সদস্যের এই কমিটিতে ১০ জন থাকবে উন্নত ও ধনী দেশগুলোর প্রতিনিধি এবং ১৪ জন থাকবে উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর প্রতিনিধি। এই ১৪ জনের মধ্যে ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র থেকে দুজন ও স্বল্পোন্নত দেশ থেকে দুজন প্রতিনিধি নির্বাচিত হবে।

তারা আরও বলেন, বাংলাদেশ যেহেতু অতিবিপদাপন্ন এবং নিম্নআয়সম্পন্ন দেশের ক্যাটাগরিতে রয়েছে, পাশাপাশি বাংলাদেশ এমভিসি এবং ভি-২০ দেশগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে সেহেতু আমরা অবশ্যই এই কমিটিতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জোর দাবি এবং আশা করতে পারি। আমরা মনে করি সরকার বিষয়টিকে অতি গুরুত্ব দেবে এবং যথাসময়ের মধ্যে প্রতিনিধি নিশ্চিত করবে।

এ সময় জলবায়ু পরিবর্তন রোধে অতি বিপদাপন্ন এবং ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী।

সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইক্যুইটিবিডি’র পরিচালক আমিনুল হক। তিনি বলেন, লস অ্যাড ড্যামেজ ফিন্যান্স ফ্রেমওয়ার্ক (এলডিএফএফ) ঘোষণা কপ-২৭ এর একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত এটি দারিদ্র্যবান্ধব এবং ন্যায্যতাভিত্তিক ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা না যায়, ততক্ষণ এটি নিয়ে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর আত্মতৃপ্ত হওয়ার সুযোগ নেই।

সিপিআরডি’র চিফ এক্সিকিউটিভ মো. শামসুদ্দোহা বলেন, ক্ষয়-ক্ষতি বিষয়ক অর্থায়নের ঘোষণাটি কিছুটা জটিল এবং এর সঙ্গে জলবায়ু প্রশমনের শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তে বিশ্বব্যাপী গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। যার অর্থ হলো এলডিএফএফ-এর আওতায় সহায়তা পেতে হলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে ভবিষ্যতে তাদের নির্গমন হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা বাড়াতে হবে।

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের হার ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে সীমিত রাখার লক্ষ্য অর্জনে অর্থপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে কপ ২৭-এর ব্যর্থতার সমালোচনা করেন সিএসআরএল এর সেক্রেটারি জিয়াউল হক মুক্তা। তিনি বলেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা কমানোর বর্তমান আলোচনা বিজ্ঞানভিত্তিক দাবির চেয়ে ৪০ বছর পিছিয়ে। ১.৫ ডিগ্রি লক্ষ্য অর্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও বড় দূষণকারী দেশগুলোর এই বিষয়ে তেমন কোনো উদ্যোগই নয়।

কনসা-বিডি’র চেয়ার রাবেয়া বেগম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও উদ্যোগ নিতে হবে। অতি বিপদাপন্ন দেশগুলোর কথা তুলে ধরতে হবে, সরকার এবং নাগরিক সমাজ একসঙ্গে কাজ করলে তা আমাদের কণ্ঠস্বরকে শক্তিশালী করতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০২২
এসসি/এমজেএফ

News Link

Pin It on Pinterest